স্টাফ রিপোর্টার, বোলপুর, জেলার খবর : একদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ২১শে জুলাই শহীদ দিবস মঞ্চ থেকে ঘোষণা করছেন ২১শে ক্ষমতায় ফিরলে আজীবন রাজ্যবাসীকে ফ্রি তে রেশন দেবেন। অন্যদিকে সেই মমতা ব্যানার্জীর পুলিশের মদতেই বীরভূমের বোলপুর এখন মাদক (Drug) কারবারিদের একপ্রকার মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। কি নেই এই এলাকার মাদক (Drug) ব্যবসায়ীদের কাছে ! বিদেশী মদ তো এলাকাবাসীর ঘরে ঘরে। কিন্তু সহজলোভ্য এই বিদেশী মদে এখন মন ভরছে না এলাকার বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলির ছাত্র-ছাত্রীদের। তাই তাদের চাহিদা মেটাতে এখানে রমরমিয়ে চলছে কোকেন, হেরোইন, এলএসডি, গাঁজা,ডেনড্রাইট এমনকি অ্যাসিড এর নেশাতেও (Drug) আসক্ত এই এলাকার ছাত্র-ছাত্রীরা।






বোলপুর শান্তিনিকেতন স্টেশন থেকে শান্তিনিকেতন রোড ধরে প্রায় চার কিমি রাস্তা পেরিয়ে ক্যানাল মোড় থেকে খালের ধার দিয়ে দু’দিকে রাস্তা চলে গিয়েছে। একটি গিয়েছে প্রান্তিক স্টেশনের দিকে অন্যটি সিউড়ি বাইপাসের দিকে কোপাই নদীর পার ধরে। রাস্তার দু’ধারে একটু উঁকি-ঝুঁকি মারলেই দেখা মেলে বিভিন্ন জায়গায় পরে রয়েছে বহু বিদেশী মদের বোতল। স্থানীয় এক চা দোকানীর কথায়, ‘ওই যারা মেসে-টেসে থাকে ওরা রাতের দিকে এখানে এসে খায় টায়।’ মেসে থাকে মানে, পড়ুয়া? ‘তা নয়তো আবার কী’ সাফ জবাব দিলেন ওই দোকানী। এছাড়াও তিনি জানালেন, সপ্তাহান্তে ছুটি কাটাতে আসা শহুরে বাবুরাও মদের আসর বসান রবি ঠাকুরের আশ্রম প্রাঙ্গণের সন্নিহিত এলাকায়। সিউড়ি বাইপাস পেরলেই শুরু হয় অমর কুটির জঙ্গল। জঙ্গলের মাঝে কিছু কিছু জায়গায় জনবসতি থাকলেও তা জঙ্গলের পরিধির তুলনায় খুবই কম। স্বাভাবিকভাবেই সেই জায়গাটি হয়ে উঠেছে নেশারুদের স্বর্গরাজ্য। নেশা বলতে শুধু মদের নেশা নয়। ড্রাগ, হেরোইন, ডেনড্রাইট সবকিছুই চলে অবাধে। শুধু নেশা বললে কম বলা হবে, মাঝে মাঝে যৌনতৃপ্তি মেটাতেও ব্যবহৃত হয় এই জঙ্গল। মাঝে মাঝে পুলিশি উপদ্রব চলে বটে, যদিও তার প্রভাব মিটতে খুব বেশি সময় লাগে না।






নির্বিঘ্নে প্রাকৃতিক পরিবেশে সাহিত্যচর্চার জন্য বীরভূমে আশ্রম গঠন করেছিলেন নোবেল জয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই আশ্রমকে কেন্দ্র করে তিনি স্থাপন করেছিলেন পাঠ ভবন শিক্ষাকেন্দ্র। যেটি পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়।এই বিশ্বভারতীর আসে পাশের এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতন গজিয়ে উঠেছে বেশ কিছু বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। এই কলেজ গুলিতে বেশ মোটা টাকার ডোনেশনের বিনিময়ে ছাত্র-ছাত্রীরা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পাঠ নেবার আশায় ভর্তি হয়।এই সমস্ত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলির মধ্যে একটি হল বীরভূমের ইলামবাজার থানা এলাকার তথা বোলপুর সংলগ্ন দারোন্দা গ্রামে গড়ে উঠেছে একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। বাম আমলে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটির ছাত্র-ছাত্রীরা আজ পাঠন-পাঠনের পরিবর্তে মাদক সেবনেই মনোনিবেশ করেছে।শুধু এই বেসরকারি কলেজটি ই নয়, পরিবর্তনের হাত ধরে পশ্চিমবঙ্গে মা-মাটি সরকারের সান্নিধ্যে বোলপুর ও তার আশে পাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে আরও একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ও একটি আইটিআই কলেজ। কবিগুরুর সাধের শান্তিনিকেতনের নাম অনুসরণ করে গড়ে ওঠা এই কলেজগুলির ছাত্র-ছাত্রীদের অবস্থাও তথৈবচ।একেবারে পুলিশের নাকের ডগায় বসে রীতিমতন নেশা কারবারিরা প্রতিনিয়তই নানান ধরণের মাদক দ্রব্য সরবরাহ করছে এই সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের। কিন্তু এখন প্রশ্ন এই সমস্ত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলির ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে কিভাবে পাচ্ছে এই মাদক ? এর কারণ খুঁজতে গেলে প্রথমেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে কলেজ কর্তৃপক্ষকে। সূত্রের খবর,এই সমস্ত কলেজগুলির কর্তৃপক্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত স্বাধীনতাই এদেরকে মাদকাসক্ত করে তুলছে।












এই সমস্ত কলেজগুলি খোলার পর থেকেই বোলপুর সংলগ্ন আশেপাশের গ্রামগুলিতে মাদক (Drug) দ্রব্যের কারবার শুরু হয় তার প্রমান বোলপুরের বুকে প্রথম নেশাদ্রব্যের (Drug) প্রচুর পরিমাণে আমদানি শুরু হয় বোলপুর সংলগ্ন দারোন্দা গ্রামের কাছে যেদিন থেকে বেসরকারি মালিকানাধীন এই কলেজটি খুলেছিল, প্রায় ২০ বছর বছর আগে ৬০একর জায়গার উপর একটি বেসরকারি সংগঠন এই কলেজটি তৈরি করে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে পড়াশোনার জন্য ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে আসে। এই সময়ই ছাত্র-ছাত্রীরা যে স্বাধীন জীবনযাপন অবলম্বন করতে শুরু করে তারই বহিঃপ্রকাশ ওদের মধ্যে দেখা দেয় নেশার (Drug) আসক্তির মধ্যে দিয়ে। হেরোইন ড্রাগ নিতে শুরু করে বহু ছাত্র-ছাত্রী। যদিও স্থানীয় ব্যবসাদাররাই অধিক পরিমাণে মুনাফা লাভের আশায় এই ছাত্রছাত্রীদের কাছে এই ধরনের বিষ (Drug) তুলে দেয়। এইভাবে বাড়তে থাকে নেশার (Drug) দ্রব্য সামগ্রীর এক বৃহৎ চক্র। তারপর ধীরে ধীরে শুরু হয় আরো দুটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। বোলপুর মক্রমপুর সংলগ্ন একটি বেসরকারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং অপরটি বোলপুর শহরের শেষ প্রান্তে একটি বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজ। এই সমস্ত কলেজগুলির ছাত্র-ছাত্রী যারা মাদকাসক্ত (Drug) হয়ে পড়েছে তাদের মধ্যে অনেকেরই ঠিকানা এখন নেশা বিমুক্তিকরণ কেন্দ্রে। সিনিয়র দাদাদের প্রলোভনে পা দিয়ে আজ অনেক ছাত্র-ছাত্রী তাদের পরিবারের কাছে ব্রাত্য হয়ে গেছে। তাদের ছেলেমেয়েদের সুস্থ ও স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনতে তারা ছুটে যাচ্ছেন নেশা বিমুক্তিকরণ কেন্দ্রে।ঠিক এই কথাই জানিয়েছেন আমাদেরকে এক নেশা বিমুক্তিকরন কেন্দ্রের কর্ণধার।






যদিও এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনরকম কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি জেলা প্রশাসন। কারণ যে কয়টি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বোলপুরের বুকে রয়েছে তাদের মালিকদের সঙ্গে বর্তমানে শাসকদলের সুসম্পর্কের ফলেই কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না প্রশাসন। আর সেই কারণেই অনেক অভিভাবকই হারিয়ে ফেলছে তাদের প্রিয় ছেলে কিংবা মেয়েকে।বিপথে যাচ্ছে দেশের যুব সমাজ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ২১শের নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে যখন ঘোষণা করছেন,‘আমরা ক্ষমতায় থাকলে আজীবন ফ্রি রেশন পাবেন’। তখন অন্যদিকে খোদ শাসক দলেরই মদতে প্রশাসনের নাকের ডগায় মাদক সেবনে দেশের যুব শক্তির এই অবক্ষয়ের দায়ভার কি নিজের ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারবেন মাননীয়া ?