নরেশ ভকত, বাঁকুড়াঃ সময় বদলেছে, সভ্যতায় লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া, কিন্তু প্রাচীন রীতি মেনে আজও স্বমহিমায় পূজিত হন হাজরাবাড়ী মা দুর্গা (Hazrabarir Puja) । বাঁকুড়ার পাত্রসায়ের ব্লকের হাজরা জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো (Hazrabarir Puja) এলাকার সবথেকে প্রাচীন পুজোরগুলির মধ্যে একটি ।
ইতিহাস বলছে ,অতীতে বর্ধমান রাজার সঙ্গে বিষ্ণুপুরের মল্লরাজার সীমানা অতিক্রম করে খাজনা আদায় করা নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষ লেগে থাকত। আর পাত্রসায়ের ছিল বিষ্ণুপুর এবং বর্ধমান রাজ সীমানার একেবারে শেষ অংশ। সেই কারণেই তৎকালীন অবিভক্ত বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলানিবাসী কাঞ্জিলাল চক্রবর্তীকে বিষ্ণুপুর মল্লরাজ তাঁর সেনাধ্যক্ষ হিসাবে নিযুক্ত করেন । তাঁর হাতে পাত্রসায়ের এলাকার হাজার একর জমি তুলে দিয়ে তাদের জমিদারির পত্তন করেন , এই হাজার একর জমির মালিকানা হিসেবেই চক্রবর্তী থেকে পদবী পরিবর্তন হয়ে উপাধি পান হাজরা ।
বংশের আদি পুরুষ কাঞ্জিলাল হাজরার চার সন্তান । এর মধ্যে বড় ছেলের ৪ সন্তান থাকলেও
বাকি তিন ছেলেরা নিঃসন্তান ছিলেন । বংশানুক্রমে জমিদারি কিভাবে চলবে এই নিয়ে সেনাধ্যক্ষ কাঞ্জিলাল হয়ে পড়েছিলেন শোকহত । কাঞ্জিলালের বড়ছেলের তৃতীয় সন্তান হরিপদ একদিন ঘোড়ায় চড়ে খাজনা আদায় করতে যান তৎকালীন জঙ্গলাকীর্ন রাস্তায়। কিন্তু ফেরার পথে দিকভ্রষ্ট হয়ে পথ হারিয়ে ফেলেন । স্থানীয় রঙ্কিনী পুষ্করিণীতে জল পান করে একটি গাছের নিচে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন হরিপদ । সেই সময় মা দুর্গা বালিকা রূপে রঙ্কিনী পুষ্করিণী থেকে উঠে এসে পথ দেখিয়ে দেন তাঁকে ।
সেই অলৌকিক ঘটনার কথা জানিয়ে বিষ্ণুপুর মল্ল রাজাকে একটি চিঠি লেখেন হরিপদ । তারপরেই বিষ্ণুপুর রাজার অর্থানুকূল্যে শুরু হয় মহামায়ার আরাধনা। প্রতিষ্ঠিত হয় মন্দির ।
প্রায় সাড়ে চারশো বছর ধরে রীতিনীতি মেনে হয়ে আসছে হাজরাবাড়ীর মা দুর্গার আরাধনা(Hazrabarir Puja) । জমিদার পুজোর রীতিনীতি অন্যান্য সর্বজনীন পুজোর থেকে আলাদা তো হবেই । এই জমিদার বাড়িতে একচালা প্রতিমা হয়। পূজো হয় বৃহৎ নন্দিকা পুরান মতে । নিয়ম-নীতি মেনে আদিকাল থেকেই অষ্টমীর দিন হয় বলির আয়োজন ।
তবে এই বছর করোনার পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশ মেনে মুখে মাস্ক, স্যানিটাইজার ও সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনেই করা হবে পুজো (Hazrabarir Puja) । ফুল , বেলপাতা নিজের নিজের বাড়ি থেকে এনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দেওয়া হবে মায়ের পায়ে পুষ্পাঞ্জলী । তবে বাড়ির অন্যান্য সদস্য যারা দূর দূরান্তে থাকেন তারা করোনা অবহে তাদের বাড়ির পুজোয় শামিল হতে পারবেন না । জাকঁজমকে ভাটা পড়লেও এবছরও রীতিনীতি মেনে নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো করবেন জমিদার বাড়ির সদস্যরা।