শুভময় পাত্র, বীরভূম, জেলার খবর : মানুষ যেখানে আজ সূর্যে যাবার চিন্তা-ভাবনা করছে, যখন আজ প্রতিটা মানুষের কাছে ‘স্কিন টাচ’ স্মার্ট ফোন আছে। যখন মানুষ তার একটি আঙুলের মাদ্ধমেই নিমেষে গোটা পৃথিবীর খবরা-খবর জানতে সক্ষম, তখন এই ডিজিটাল এর যুগে মধ্যযুগীয় বর্বরতার এক জ্বলন্ত নিদর্শন পাওয়া গেল বীরভূম জেলায়।
রাঢ় বাংলায় কুসংস্কার যে এখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন জেলাতে তা জানা গেল আবারও। যে সমস্ত জেলায় আদিবাসী সংখ্যা বেশি সেই সমস্ত জেলাতে এই ধরনের কুসংস্কার প্রায়ই খবরের কাগজে উঠে আসে। এদিন বীরভূম জেলার বোলপুর থানার অন্তর্গত শিয়ান মুলুক গ্রাম পঞ্চায়েতের মনিকুন্ডুতলা আদিবাসী গ্রামে দেখা গেল তেমনই এক ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এর আগে বীরভূমের বিভিন্ন গ্রামে বিশেষ করে আদিবাসী গ্রামগুলিতে বহু মহিলাকে ডাইনি (witch) সন্দেহে গ্রাম থেকে বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে।মূলতঃ দেখা গেছে যারা বিভিন্ন কাজে বা পড়াশোনার জন্য একটু আধুনিক সমাজের সঙ্গে মিশেছেন তাদেরকেই এই আদিবাসী সমাজ কিছুতেই নিজেদের সমাজের অন্তর্ভুক্ত করতে চাননা, আর সেই কারণেই আদিবাসী সমাজের মধ্যে সৃষ্টি হয় বিতর্ক।
আদিবাসী গ্রামগুলির যে মোড়ল থাকেন তিনি সিদ্ধান্ত নেন কি করা যাবে এক্ষেত্রে, ওনারাই বিধান দেন কি করনীয়। ঠিক এই ভাবেই যশোমতী হাসদা কে গ্রাম থেকে বহিষ্কারের বিধান দেয় ওই গ্রামের মোড়ল পটল মুর্মু। সারারাত বাইরে কাটিয়ে আজ সকাল থেকেই যশোমতী দেবী তার পরিবারকে নিয়ে কখনো বর্তমান শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের কাছে উপস্থিত হন সুবিচারের আশায়, আবার কখনো নিজের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের কাছে সাহায্যের জন্য এগিয়ে যান। কিন্তু সব জায়গাতেই তারা কোনরকম সুবিধা না পাওয়ায় রীতিমত আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে যশোমতী হাসদা ও তার পরিবারের লোকজন।
বর্তমান সমাজে শাসন ব্যবস্থায় যদি এই ধরনের পরিকাঠামো (witch) থাকে, তাহলে সাধারণ মানুষ কিভাবে নিজেদেরকে স্বনির্ভর মনে করবে ? সেটাই এখন ভাবনার বিষয়। প্রশাসন কি কোনরকম সাহায্যের হাত বাড়াবে? এই আদিবাসী পরিবারের পাশে এসে কি আদৌ দাঁড়াবে কোন রাজনৈতিক দল সেটাই এখন দেখার বিষয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যতই ডিজিটাল ইন্ডিয়া গড়ার কথা বলুন না কেন, যতদিন আমাদের সমাজে যশোমতী হাঁসদার মতন নির্যাতিতার সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবেন না ততদিন আমরা যতই নিজের ‘স্মার্ট ফোন’ নিয়ে সেলফি তুলে নিজেকে স্মার্ট মনে করি না কেন, আখেরে সেটা যে ষোলো আনাই বৃথা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।