ডিজিটাল ডেস্ক, জেলার খবর : আপনার কি মনে হচ্ছে যে আপনার জীবনে সবকিছুই শেষ ? কিছুই আর বাকি নেই আপনার বেঁচে থাকার জন্য ? তাহলে আপনাকে একবার দেখতেই হবে অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের (Sushant Sing Rajput)শেষ সিনেমা ‘দিল বেচারা’। দেখুন কীভাবে এ ছবি বেঁচে থাকার রসদ জোগায়? সদ্য প্রয়াত এই অভিনেতার সর্ব শেষ ছবিটি দর্শকদের কাছে একেবারে পৌঁছে দিতে এই প্রথম কোন ওটিটি প্লাটফর্ম এ মুক্তি লাভ করল। আর গোটা দেশ ঠিক এই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্যই শ্বাস রুদ্ধ করে অপেক্ষা করছিল।
ভারতীয় সিনেমা জগতে এই প্রথমবার কোন বিগ বাজেটের ছবি মাল্টিপ্লেক্সে মুক্তি না পেয়ে মুক্তি পেল ওটিটি প্লাটফর্ম এ। এই সিনেমার নেপথ্যে সেই সুশান্ত সিং রাজপূত (Sushant Sing Rajput)। যাঁর অকাল প্রয়ানে তোলপাড় হয়েছে আসমুদ্র হিমালয়। এত থেকে আশি সবাই এই অভিনেতার (Sushant Sing Rajput) মৃত্যুর রহস্যের সত্যতা জানার জন্য গত প্রায় এক মাস ধরে আন্দোলন বিক্ষোভ চালিয়ে গেছেন। এমনকি প্রয়াত এই অভিনেতার (Sushant Sing Rajput) শেষ ছবি কেন কোন সিনেমা হলে মুক্তি না পেয়ে দর্শকদের একেবারে বিনামূল্যে একটি ওটিটি প্লাটফর্ম এ দেখার সুযোগ করা হচ্ছে তা নিয়েও সুশান্তের (Sushant Sing Rajput) অনুরাগীরা সওয়াল তোলেন।






পরিচালক মুকেশ ছাবড়ার ডেবিউ ফিল্ম দিল বেচারায় মুক্ষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুশান্ত সিং রাজপূত (Sushant Sing Rajput) , নবাগতা সঞ্জনা সঞ্জনা সঙ্ঘী, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, সইফ আলি খান। এই সিনেমার রিভিউ লিখতে গিয়ে যে একটু ভাবুক হবই তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই একটি সুন্দর মন ভাল করা গল্পের কথাই বলব আজ। আজকের এই রিভিউতে থাকবে না কোন প্রকার কাটা-ছেড়া।
ইম্যানুয়েল রাজকুমার জুনিয়র ওরফে ম্যানি, দিল বেচারা সিনেমার হিরো গতানুগতিক ভঙ্গিতে এই সিনেমাকে শেষ হতে দেননি। সে সমস্ত হিসেবে-নিকেশ একেবারে ওলট-পালট করে দিয়েছে তার প্রেমিকা কিজির জীবনে। আর সাথে আমার-আপনার মতন পাগল দর্শকদের জীবনেও।তবে এই ধরণের অভিনয় যে কেবল সুশান্তই (Sushant Sing Rajput) পারে তা আবারও একবার প্রমান পাওয়া গেল। যে অভিনেতা (Sushant Sing Rajput) কোনওরকম কুণ্ঠাবোধ না রেখেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দর্শকদের কাছে অনুরোধ করতে পারেন, “প্লিজ, আমার সিনেমা দেখুন, নাহলে হয়তো ইন্ডাস্ট্রিতে বেশিদিন টিকে থাকতে পারব না…” সেই সমস্ত দর্শকদের হিসেবেও গরমিল হতে বাধ্য সুশান্তের ‘দিল বেচারা’র জন্য!






জীবনে আর হাতে গোনা মাত্র ক’টা দিন, কিন্তু তবুও হাসিমুখে সেই জীবনে দাপিয়ে বেড়ানো খুব একটা সহজ কথা নয়! পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে আর মাত্র খানিকক্ষণের অপেক্ষা জেনেও কাউকে ভাল লাগা, তার প্রেমে পড়া, কোনওরকম সংকোচ না রেখে সাহস করে মনের কথা বলা, স্বপ্নে ভেসে যাওয়া… খুব কি সোজা কথা। আবার কখনও বেঁচে থাকার আর্তিটুকু ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলা, তার অনুপস্থিতিতেও যেন কেউ তাকে মিস না করে ,তার রাস্তা তৈরি করে যাওয়া, অনেকটা সাহসের প্রয়োজন হয় এরকম মনোভাবাপন্ন হওয়ার জন্য।নিজের রিয়েল জীবনের প্রতিচ্ছবি রীল জীবনে মিল পাওয়াটা কিন্তু লক্ষণীয় এই সিনেমায়। ‘দিল বেচারা’র ম্যানিও ঠিক সেরকমই। নেপথ্যে ক্রেডিটটা অবশ্যই পরিচালক মুকেশ ছাবড়ার।






এই সিনেমার মূল গল্প, এক মিষ্টি প্রেমের গল্প। যে গল্প জীবনের খামতিগুলোকেই নিজের ‘প্রেরণা’ বানিয়ে নিয়ে চলতে শেখায়। সাধারণ হয়েও অসাধারণ! এতো প্রশংসা করছি বলে আপনাদের মনে হতেই পারে যে অভিনেতা সুশান্ত আজ নেই বলেই এতো প্রশংসা! না, তা একেবারেই নয়।এই ভূয়সী প্রশংসার নেপথ্যের কারণটা ? একমাত্র এই সিনেমায় তাঁর মনভোলানো অভিনয়। সহজ-সরল, সাদামাটা, প্রাণবন্ত একটা ছেলে যে নিজের জীবনের আঁধারগুলো ঢেকেও অনায়াসে অন্যের সূর্য হয়ে উঠতে পারে। নিজে পৃথিবীতে আর কটা মাত্র দিনের অতিথি জেনেও অন্যের চোখের জল মোছাতে পারে। ‘ছিছোঁড়ে’র পর আবারও, এই সিনেমাতেও বেঁচে থাকাতে শেখাল সুশান্ত। শেখাল দুঃসময়েও কীভাবে জীবনের আনন্দ নিতে হয়।






গোটা সিনেমাজুড়ে একটা মৃত্যুভয় তাড়া করে বেড়ালেও কোথায় যেন ক্ষণস্থায়ী জীবনের একটা অন্যদিকের সঙ্গে পরিচয় করাল ‘দিল বেচারা’। ম্যানি-কিজির দুষ্টু-মিষ্টি রোম্যান্স, হাসিঠাট্টা, আবেগ দেখে অজান্তেই দর্শকের চোখের কোণ ভিজবে তার বাজি অনায়াসেই ধরা যায় । এই গল্প ক্যানসার আক্রান্ত কিজি বাসুর হলেও ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’-এর খেতাব ম্যানিরই প্রাপ্য। কারণ, গল্পের ইতি টানল সে নিজেই। পুরোটাই যেন একেবারে নিজের প্ল্যান মাফিক।






এতক্ষন তো শুধুই অভিনেতা সুশান্ত বা ম্যানির কোথায় বললাম। কিন্তু বাকি অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও অনবদ্য। ‘দিল বেচারা’র অভিনেত্রী সঞ্জনা সঙ্ঘীর অভিনয়ের দক্ষতাও দর্শকদের মন জয় করেছে। কিজি বাসুর মা-বাবা অর্থাৎ স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় এবং শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় এর কথা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এক কথায় ‘দুর্ধর্ষ’। জামসেদপুরের সাদামাটা বাঙালি পরিবার। কেয়ারিং মা স্বস্তিকা। আর আদুরে, মেয়েকে নিয়ে চিন্তাশীল বাবার ভূমিকায় শাশ্বত। পুরো গল্পেই দু’জনের চরিত্র বেশ গুরুত্বপূর্ণ রোল প্লে করেছে। ছোট্ট দৃশ্যে অতিথি শিল্পী হিসেবে নজর কেড়েছেন সইফ আলি খানও । সবমিলিয়ে হাসি, কান্না, মজা-ঠাট্টা.. দর্শকদের ভাললাগার সবরকম উপকরণই মজুত এই ছবিতে। ‘দিল বেচারা’ সিনেমার ট্রেলার মুক্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যেমন অ্যাভেঞ্জার্সদের পিছনে ফেলে দিয়ে সর্বকালের সেরা রেকর্ড গড়েছিল, এই সিনেমাও যে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ময়দানে এক নয়া ইনিংস গড়বে, তা হলফ করে বলাই যায়।সব শেষে মন থেকে একটা কথা না বলে পারছি না। সুশান্ত তোমার এভাবে চলে যাওয়া মানতে পারছি না। কেন তুমি বারবার তোমার ছবিতে নতুন করে বাঁচতে শিখাচ্ছ, আর নিজে রিয়েল লাইফে হেরে গেলে ?





